মায়া মমতা মানুষের জীবনের খুবই অবিচ্ছেদ্য একটি অংশ। মায়া মানুষকে পশুর থেকে আলাদা প্রাণী করে। এই পৃথিবীতে মায়া না থাকলে মানুষ এত বছর এই পৃথিবীতে থাকতে পারতো না। মায়া নিয়ে উক্তি গুলো আমাদের মনে তেমনি নাড়া দেয়।
যুগে যুগে মানুষেরা তাদের জীবন উপলব্ধি থেকে নানা রকম মায়া নিয়ে উক্তি বর্ণনা করে গেছেন। মায়া নিয়ে উক্তি গুলো আমাদের যেন অন্য রকম প্রশান্তি দেয়। মনে হয় যেন আমাদের উপলব্ধি করায় যে আমরা মানুষ। মনে হয় যেন কোনো অদৃশ্য শক্তি আমাদের বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছে আমরা মানুষ। এই মানবজাতির প্রতি মায়া দেখানো আমাদের দায়িত্ব।
মায়া নিয়ে উক্তি
ধর্মীয় দিক থেকে সৃষ্টিজগতের প্রতি মায়া ও দয়া দেখানোর কথা বার বার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। তেমনি কিছু মায়া নিয়ে উক্তি নিয়ে আপনার সামনে এই উপস্থাপনাঃ
১। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই সবচেয়ে পরিপূর্ণ ঈমানের অধিকারী সেই ব্যক্তি যে আচার-আচরণে সর্বোত্তম এবং তার পরিবারের প্রতি সবচেয়ে দয়ালু।” (সুনানে তিরমিযী, হাদিস : ২৬১২)
২। মানব জীবনের উদ্দেশ্য হ’ল সেবা করা এবং মায়া দেখানো এবং অন্যদের সাহায্য করার ইচ্ছা। — অ্যালবার্ট শোয়েৎজার
৩। মায়া এবং সহনশীলতা দুর্বলতার লক্ষণ নয়, শক্তির লক্ষণ। — দালাই লামা চতুর্দশ
৪। ফুলের মতো হও যে তার সুগন্ধ দেয় এমনকি যে হাত তাকে চূর্ণ করেছে। — আলী ইবনে আবি তালিব
৫। আমরা প্রত্যেকে মঙ্গল, ভালবাসা এবং মায়ার জন্য তৈরি। আমরা যখন এই সত্যগুলির সাথে বাস করি তখন আমাদের জীবন পৃথিবীর মতোই পরিবর্তিত হয়। — ডেসমন্ড টুটু
৬। মায়া দেখানো আপনার আত্মের সর্বোচ্চ চূড়ান্ত অভিব্যক্তি। – রাসেল সিমন্স
৭। তারাই সবচেয়ে সুখী যারা অন্যের জন্য সবচেয়ে বেশি করে। – বুকার টি. ওয়াশিংটন
৮। ধনী এবং দরিদ্র সকলের প্রতি সমবেদনা রাখো, প্রত্যেকেরই তাদের কষ্ট রয়েছে। – বুদ্ধ
৯। মায়া হল নিজের কষ্টের বাইরে তাকানো, অন্যের কষ্ট দেখা। – ইয়াসমিন মোজাহেদ
১০। কুরআনে আল্লাহ (সুবহানাহু ওয়া তায়ালা) বলেছেন: “তোমরা পরস্পরকে তাকওয়া ও ধার্মিকতার কাজে সাহায্য কর। আর পাপ ও সীমালঙ্ঘনের কাজে একে অপরকে সাহায্য করো না। আর আল্লাহ সম্পর্কে সচেতন হোন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা” (কুরআন ৫:২)।
১১। মায়া বলতে বোঝায় সমস্ত প্রাণীর দুঃখ-কষ্ট দূর করার আকাঙ্ক্ষা হৃদয়ে উদিত হওয়াকে। – রাম দাস
১২। রাসুল (সাঃ) বলেছেন: “যারা তোমার সাথে খারাপ করে তুমি তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করো না, বরং তুমি তাদের সাথে ক্ষমা ও দয়ার সাথে ব্যবহার করো।” (সহীহ বুখারী)
১৩। উদারতা হল মায়া এবং প্রেমময়-দয়ার অভ্যন্তরীণ মনোভাবের সবচেয়ে স্বাভাবিক বাহ্যিক অভিব্যক্তি। — দালাই লামা চতুর্দশ
১৪। মায়া হ’ল সমস্ত কিছুর পরস্পর নির্ভরতার তীব্র সচেতনতা। – টমাস মার্টন
১৫। “প্রত্যেক জীবিত বস্তুর প্রতি দয়ার প্রতিদান রয়েছে” – হযরত মুহাম্মদ (সা.)
১৭। সহানুভূতি নৈতিকতার ভিত্তি। – আর্থার শোপেনহাওয়ার
১৮। “তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা ঈমান আনবে এবং তোমরা ঈমান আনবে না যতক্ষণ না তোমরা একে অপরকে ভালোবাসো। আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছুর কথা বলব না যা করলে তোমরা একে অপরকে ভালবাসবে? নিজেদের মধ্যে সালাম ছড়িয়ে দাও।” (মুসলিম)
১৯। ভালবাসা এবং মমতায় পূর্ণ হৃদয় হল অভ্যন্তরীণ শক্তি, ইচ্ছাশক্তি, সুখ এবং মানসিক প্রশান্তি এর প্রধান উৎস। — দালাই লামা চতুর্দশ
২০। নবী (সাঃ) বলেছেন: “আল্লাহ দয়ালু, এবং তিনি সকল বিষয়ে দয়া পছন্দ করেন” (বুখারী ৬৫২৮)
শেষ কথা
উপরোক্ত মায়া নিয়ে উক্তি গুলো আমাদের বার বার স্মরণ করিয়ে দেয় সৃষ্টিজগতের প্রতি মায়া প্রদর্শন আমাদের কতটা দরকারি। এই পৃথিবীতে আমরা একা বাচার জন্য আসিনি। সবাইকে সাথে নিয়েই আমাদের বাচতে হবে। সবাইকে ভালো রাখার চেষ্টা করতে হবে।
আমাদের মনের প্রতিহিংসা, আক্রোশগুলো এই মায়া নিয়ে উক্তি গুলো দূর করতে অপরিসীম ভূমিকা রাখতে পারে। আমাদের গড়ে তুলতে পারে একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন সহানুভূতিশীল মানুষ হিসেবে নিজেদের তৈরি করতে।